যিলহাজ্জ মাসের গুরুত্ব ও আমলসমূহ:-
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو القَعْدَةِ، وَذُو الحِجَّةِ، وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ، الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ، أَيُّ شَهْرٍ هَذَا “، قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ ذا الحِجَّةِ؟ ، قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: فَأَيُّ بَلَدٍ هَذَا؟ . قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ البَلْدَةَ ؟ . قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: فَأَيُّ يَوْمٍ هَذَا ؟ . قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ؟ . قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: ” فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ، – قَالَ مُحَمَّدٌ: وَأَحْسِبُهُ قَالَ – وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، وَسَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ، فَسَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي ضُلَّالًا، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ، أَلاَ لِيُبَلِّغَ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يُبَلَّغُهُ أَنْ يَكُونَ أَوْعَى لَهُ مِنْ بَعْضِ مَنْ سَمِعَهُ “. فَكَانَ مُحَمَّدٌ إِذَا ذَكَرَهُ يَقُولُ: صَدَقَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ: أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ مَرَّتَيْنِ
অনুবাদ: আবূ বাকরাহ সূত্রে নাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সময় ও কাল আবর্তিত হয়ে সেদিনের অবস্থায় ফিরে এসেছে। যেদিন আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর হয় বার মাসে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিন মাস ক্রমান্বয়ে আসে- যেমন যিলকদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররাম এবং রজব মুযার যা জামাদিউল আখির (সানী) ও শা‘বান মাসের মাঝে হয়ে থাকে। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। এরপর তিনি (কিছুক্ষণ) চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, হয়তো তিনি এ মাসকে অন্য কোনো নামে নামকরণ করবেন। তারপর তিনি বলেন: এটি কি যিলহজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম যে, হয়তো তিনি এ শহরের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি বললেন: এটি কি নির্দ্ধারিত শহর (মক্কা) নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোন দিন? আমরা বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তারপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। এতে আমরা মনে করলাম যে, হয়তো তিনি এ দিনটির অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি বলেলেন: এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন: তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ (রাবী মুহাম্মাদ বলেন: আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছিলেন) তোমাদের মান-ইজ্জত তোমাদের উপর পবিত্র। যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস। তোমরা শীঘ্রই তোমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হবে। তখন তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান! তোমরা আমার মৃত্যুর পরে পথভ্রষ্ঠ হয়ে পড়ো না যে, একে অন্যের গর্দান উড়াবে। শোন, তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে আমার পয়গাম পৌঁছিয়ে দিবে। অনেক সময় প্রত্যক্ষ শ্রবণকারীর চাইতে খবর পাওয়া ব্যক্তি অধিকতর সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে।
রাবী মুহাম্মাদ (ইবনু সীরীন (রহি:) যখনই এ হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তিনি বলতেন: মুহাম্মাদ সত্যই বলেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ বললেন: তোমরা শোন! আমি কি (আল্লাহর পায়গাম) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এভাবে দু’বার বললেন।
রাবী পরিচিতি : নাম নুফাই ইবনুল হারেস আস্ সাকাফী, আবূ বাকরাহ (রাহ.) তাঁর উপনাম। প্রসিদ্ধ সাহাবী। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, তাঁর নাম নুফাই ইবনু মাসরূহ। নাবী যখন তায়েফ দুর্গ অবরোধ করেন তখন তিনি একটি উঠতি বয়সের উট (যাকে আরবিতে বাকরাহ বলা হয়) নিয়ে দুর্গ থেকে পলায়ন করেন এবং নাবী -এর সাথে মিলিত হন। এজন্য তাকে আবূ বাকরাহ বলা হয়। নাবী তাকে ঐদিনই মুক্ত করে দেন। আর নাবী তখন ঘোষণা করেছিলেন যে, তায়েফবাসীদের দাসসমূহের মধ্য হতে কেউ যদি আত্মসমর্úণ করে তাঁর সাথে মিলিত হয় তাহলে সে স্বাধীন হয়ে যাবে। পরবর্তীতে তিনি বসরাতে বসবাস করেন এবং তার অনেক সন্তানাদী হয়। তিনি স্বয়ং নাবী -এর নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২১০। তার নিকট হতে তার সন্তানগণ যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের নাম নিম্নরূপ।
(১) রাওয়াদ ইবনু আবী বাকরাহ
(২) আব্দুর রহমান ইবনু আবী বাকরাহ
(৩) আব্দুল আযীয ইবনু আবী বাকরাহ
(৪) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবী বাকরাহ
(৫) মুসলিম ইবনু আবী বাকরাহ
(৬) কাইয়িসাহ বিনতে আবী-বাকরাহ। এছাড়া আরো অনেক তাবেয়ী তাঁর নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ৫১ অথবা ৫২ হিজরীতে বাসরাতে মৃত্যুবরণ করেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ
সময় ও কাল আবর্তিত হয়ে সেদিনের অবস্থায় ফিরে এসেছে যেদিন আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন।
অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা যখন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সে সময় দিন ও রাত্রি এক সমান করে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বছরের কোনো সময়ের দিন বড় করেছেন ও রাত ছোট করেছেন। আবার কোনো সময় দিন ছোট করে রাত বড় করেছেন। যে বছর রসূলুুল্লাহ বিদায় হাজ্জ করেন সে বছর যিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখের দিন প্রথম সৃষ্টি দিনের মতই দিন ও রাত্রি সমান ছিল।
السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا বছর হয় বারো মাসে এখানে উদ্দেশ্য চান্দ্র্য বৎসর। বর্ণিত আছে যে, আরবগণ বছরের হিসাব করত তের মাসে, কোনো বর্ণনায় এসেছে, ১২ মাস ২৫ দিনে বছর গণনা করা হতো। নাবী বলেছিলেন যে, সৃষ্টির সূচনা থেকেই চান্দ্র্য বছর বারো মাসেই গণনা করা হয়।
مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস।
অর্থাৎ, এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম।
: ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ তিন মাস ধারাবাহিকভাবে পরস্পরে মিলিত। অর্থাৎ, যিলকদ-যিলহাজ্জ এবং মুহাররাম। এ কথা দ্বারা নাবী জাহেলী যুগের সে প্রথাকে বাতিল করেছেন যাতে তারা মুহাররাম মাসকে পিছিয়ে নিয়ে সফর মাসকে এগিয়ে নিয়ে আসতো। যাতে করে ধারাবাহিকভাবে তিন মাস পর্যন্ত মারামারি ও যুদ্ধবিগ্রহ হতে বিরত থাকতে না হয়। তারা এভাবে গণনা করত। যিলকাদ, জিলহাজ্জ, সফর ও মুহাররাম। কিন্তু নাবী বলে দিলেন, মাসের ঐ ক্রম ঠিক নয় বরং মাসের ক্রম হলো এভাবে- যিলকদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররাম।
وَرَجَبُ مُضَرَ، الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى الآخرو شعبان.
মুযার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা আল-আখির ও শা‘বান মাসের মাঝে নির্দিষ্ট মাস। রজব মাসকে মুযার গোত্রের সাথে সম্পৃক্ত করার কারণ এই যে, তারা এ মাসকে সর্বদা সম্মান করত।
আরবের কোনো কোনো গোত্র রজব মাসকে আগ-পিছ করলেও মুযার গোত্রের লোকেরা তা করত না। বরং তারা সর্বদাই রজব মাসকে যথাস্থানে অর্থাৎ, জুমাদা আল-আখির ও শা‘বান মাসের মাঝখানেই রাখতো এবং যথারীতি এ মাসকে তারা সম্মান করতো।
যেহেতু বছরের চার মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে তাই মর্যাদাপূর্ণ মাস মুহাররাম মাস দিয়ে বছরের সূচনা করা হয়েছে এবং বছরের মাঝখানে একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস রাখা হয়েছে। সর্বোপরি দুটি সম্মানিত মাস দ্বারা বছর সমাপ্ত করা হয়েছে। যাতে বছর জুড়েই সম্মানিত মাস পাওয়া যায় এবং বছরের শেষটা যেন অধিক সুন্দর হয় এজন্য সম্মানিত দু’মাস দ্বারা বছর শেষ করা হয়েছে। আর শেষ ভালো যার সব ভালো তার, এদিকে খেয়াল করা হয়েছে।
যিলহাজ্জ মাসের আমলসমূহ: বছরে বারো মাসের মধ্যে যিলহাজ্জ মাস একটি অতি সম্মানিত মাস।
সহীহ হাদীসের আলোকে এ মাসের আমলসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো:-
(১) হাজ্জ করা: ইসলামের ৫টি রোকনের মধ্যে হাজ্জ একটি রোকন। প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরয। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর হাজ্জের অধিকাংশ কাজ সম্পাদন করতে হয় যিলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে।
(২) যিলহাজ্জ মাসের ১ম থেকে ৯দিন সিয়াম পালন করা: কেননা এ সময়ের সৎ কাজসমূহ আল্লাহর নিকট অন্য সময়ের সৎ আমলের চাইতে অধিক প্রিয়। নাবী বলেছেন:
مَا من أيامٍ العملُ الصَّالح فيهن أحب إِلَى الله من هَذِه الْأَيَّام الْعشْر
(যিলহাজ্জ মাসের প্রথম) দশ দিনের সৎ আমলের চেয়ে কোন আমলই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। তাই যিলহাজ্জ মাসের ১ম থেকে ৯দিন সিয়াম পালন করা মুস্তাহাব।
(৩) আরাফার দিনে সিয়াম পালন করা: কেননা এ সিয়াম দ্বারা দুই বৎসরের সগীরাহ গোনাহ মাফ হয়ে যায়
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْ قال: قال رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
আবূ কাতাদাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ বলেছেন: আরাফাহ দিবসের সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তবে আরাফাতে অবস্থানরত হাজীদের জন্য ঐদিন সিয়াম পালন করা সুন্নাত নয়। কেননা নাবী ঐদিন সিয়াম ভঙ্গ করেছেন। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ كُرَيْبٍ، مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، عَنْ مَيْمُونَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: ্রإِنَّ النَّاسَ شَكُّوا فِي صِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَرَفَةَ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ مَيْمُونَةُ بِحِلَابِ اللَّبَنِ، وَهُوَ وَاقِفٌ فِي الْمَوْقِفِ، فَشَرِبَ مِنْهُ وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ
ইবনুু আব্বাস -এর মুক্ত দাস কুরাইব সূত্রে নবী -এর সহধর্মিনী মাইমূনা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: লোকেরা আরাফার দিন নাবী -এর সাওম সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। এরপর মায়মূনা তাঁর নিকট এক পিয়ালা দুধ পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় তিনি আরাফার ময়দানে মাওকিফে অবস্থানরত ছিলেন। তখন তিনি তা পান করলেন। আর লোকেরা তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল।
(৪) ১০ যিলহাজ্জ থেকে ১৩ যিলহাজ্জের মধ্যে সামর্থবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা: কেননা নবী স্বয়ং কুরবানী করেছেন এবং সামর্থবান ব্যক্তিদের কুরবানী করতে বলেছেন।
عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْكَفَأَ إِلَى كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ
আনাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ দুটি সাদা-কালো রং-এর শিংওয়ালা ভেড়ার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং নিজ হাতে সে দুটিকে যবহ করলেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
আবূ হুরায়রাহ থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করলো না সে যেন ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।
(৫) কুরবানী দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নখ না কাটা ও চুল না ছাটা:
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ
উম্মু সালামাহ থেকে বর্ণিত যে, নাবী বলেছেন: যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করতে ইচ্ছুক হয় সে যেন চুল ছাঁটা ও নখ কাটা হতে বিরত থাকে। যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ উদয় হওয়ার পর থেকে ১৩ যিলহাজ্জের আসর পর্যন্ত অধিক হারে তাকবীর পাঠ করা। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর।
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَأَبُو هُرَيْرَةَ: يَخْرُجَانِ إِلَى السُّوقِ فِي أَيَّامِ العَشْرِ يُكَبِّرَانِ، وَيُكَبِّرُ النَّاسُ بِتَكْبِيرِهِمَا وَكَبَّرَ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ خَلْفَ النَّافِلَةِ
ইবনু উমার ও আবূ হুরায়রাহ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন এবং তাকবীর পাঠ করতেন। তাদের অনুসরণে লোকেরাও তাকবীর পাঠ করতো। এমনকি মুহাম্মাদ ইবনু আলী নফল সালাতের পরেও তাকবীর পাঠ করতেন। আইয়ামে তাশরীকে আমলের ফাযীলাত অধ্যায়।
(৬) ঈদুল আযহার দিনে সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে গমন করা: নাবী ঈদুল আযহার দিনে কিছু না খেয়েই ঈদগাহে গমন করতেন। আর এটিই সুন্নাত।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরাইদা সূত্রে তার পিতা বুরাইদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী -এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাত আদায় করার আগে কিছু খেতেন না।
হাদীসের শিক্ষা:
১. যিলহাজ্জ একটি মযার্দাপূর্ণ মাস।
২. আরবী তথা চন্দ্র মাসসমূহের নাম আল্লাহ কর্তৃক নির্দ্ধারিত এবং এর ক্রমও আল্লাহ কর্তৃ নির্দ্ধারিত।
৩. চন্দ্র মাসের ক্রমিকে আগ-পিছ করার কোন সুযোগ নেই।
৪. যিলহাজ্জ মাসের সৎ আমলগুলো আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
৫. দিবসসমূহের মধ্যে আরাফার দিবস সর্বাধিক মর্যাদাবান দিবস।
৬. কিয়ামত দিবসে সকল আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে।
৭. মুসলমানদের মাঝে পরস্পর মারামারি করা হারাম।
৮. হাদীস শ্রবণকারীর কর্তব্য হলো তা অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া।
৯. হাদীস সংরক্ষণ করা একটি জরুরী বিষয়। যাতে হাদীস অনুযায়ী আমল করা যায়।
মোঃ ঈসা মিঞা
মুহাদ্দিস, মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
দারসুল হাদীস- মাসিক তর্জুমানুল হাদীস ৪র্থ বর্ষ-৪র্থ সংখ্যা (জুলাই-২০২১)
রেফারেন্স:
সহীহ বুখারীহ হা: ৪৪০৬
সূরা আলে ইমরান আয়াত: ৯৭
তিরমিযী হা: ৭৫৭
সহীহ মুসলিম হা: ১১৬২
সহীহ মুসলিম হা: ১১২৪
সহীহ বুখারী হা: ৫৫৫৪
ইবনু মাজাহ হা: ৩১২৩
সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭৭
সহীহ বুখারী
তিরমিযী হা: ৫২৪