১. যিলহজ্জ মাসের ১ তারিখ হতে ১৩ তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিম্নের তাকবীরটি পাঠ করবে-
الله اكبر، الله اكبر، لا اله الا الله، الله اكبر، الله اكبر ، ولله الحمد
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
নিজ বাড়িতে, মসজিদে, হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে যে যেখানেই থাকবে, পুরুষেরা উঁচু আওয়াজে এবং নারীরা নীরবে তাকবীর পাঠের দ্বারা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করবে।
২. যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করবে সে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উদয়ের পর হতে কুরবানী না করা পর্যন্ত তার চুল, নখ এবং শরীরের কোন পশম কর্তন করবে না।
৩. ঈদুল আযহার দিন সকালে ভালভাবে গোসল করে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অর্জন করত সাধ্যানুযায়ী মার্জিত সুন্দর পোশাক পরিধান ও সুগন্ধি ব্যবহার করে কিছু না খেয়ে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাবে। অতঃপর ঈদের সালাত শেষ করে বাড়ি ফিরে কুরবানী করে খাওয়া-দাওয়া করবে।
৪. ঈদের সালাত খোলা মাঠে পড়তে হয়। ঈদের সলাতের আগে-পরে কোন সালাত নেই। তবে কোন কারণে মসজিদে পড়তে হলে দুখুলুল মাসজিদ হিসেবে দু’রাকাআত পড়তে হবে। পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও শারঈ পর্দা মেনে অত্যন্ত শালীনতার সাথে ঈদগাহে যাবে।
৫. ঈদের সালাতের জন্য যেহেতু আযান-ইকামত নেই, তাই সালাতে আসার জন্য ডাকাডাকি করা ঠিক নয়। ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়তে হয়। প্রথম রাকাআতে অতিরিক্ত ৭ তাকবীর কিরাআতের পূর্বে এবং দ্বিতীয় রাকাআতে ৫ তাকবীর কিরাআতের পূর্বে বলবে। অতঃপর খুতবা প্রদান করবে।
৭. সালাতের পর সামর্থবান ব্যক্তিরা কুরবানী করবে। সাধ্যমত উট, গরু অথবা ছাগল, ভেড়া, দুম্বা দিয়ে একাকী কুরবানী করার চেষ্টা করবে। একাকী সম্ভব না হলে একটি উট বা গরুতে ৭ শরীকে কুরবানী করতে পারবে। তবে একাকী করাই হচ্ছে উত্তম, সেটা হতে পারে একটি ছাগল, ভেড়া বা একটি দুম্বা।
৮. কুরবানী যবেহ করতে হবে ঈদের সালাতের পর। কেউ যদি সালাতের পূর্বে যবেহ করে তাহলে তা কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে না। ১০ যিলহজ্জ সালাতের পর হতে ১৩ তারিখ পর্যন্ত কুরবানী করা বৈধ। তবে ১০ তারিখে করাই হচ্ছে উত্তম।
৯. কুরবানীর পশু দাঁতিল হতে হবে। পশুর দুধ দাঁত নির্গত হওয়ার পর নতুন দাঁত উদয় হলে তাকে দাঁতিল বলা হয়। আর যদি দাঁতিল না পাওয়া যায় তাহলে উটের বয়স ৫ বছর পূর্ণ হয়ে ৬ বছরে উপনীত হয়েছে এমন হতে হবে। গরুর বয়স ২ বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পৌঁছেছে এবং ছাগলের বয়স ১ বছর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বছরে পৌঁছেছে এমন বয়সের হতে হবে।
১০. কুরবানীর পশু মোটা-তাজা, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর দেখা যায় এমন হওয়া উচিত। কানা, খোঁড়া, অন্ধ, ল্যাংড়া, রুগাক্রান্ত ও অতি দুর্বল এমন হওয়া ঠিক নয়। তেমনি কান ও লেজ কাটা শিং ভাঙ্গা না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
১১. কুরবানীর পশু নিজে যবেহ করা উত্তম, না পারলে অন্তত নিজে তা প্রত্যক্ষ করবে। আর পশু যবেহ করার নিয়ম হলো পশুকে কিবলামুখী করে বাম কাতে অর্থাৎ, মাথা দক্ষিণ দিক, লেজ উত্তর দিক আর পা পশ্চিম দিক করে শুয়াবে। অতঃপর যবেহকারী কিবলামুখী হয়ে তার ডান হাতে ছুরি আর বাম হাতে পশুর মাথা ধরে بسم الله الله اكبر বলে যবেহ করবে। মনে রাখতে হবে যে, ছুরি যেন অবশ্যই ভালো ধারালো হয়, যাতে পশুর কষ্ট না হয়।
১২. কুরবানীর পশুর গোশত নিজেরা খাবে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন এবং দুস্থ-দরিদ্র মানুষদেরকে দিবে। আর পশুর চামড়া কোন দরিদ্র মানুষকে অথবা প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিবে।
১৩. ঈদের দিনে আল্লাহর নাফরমানীমূলক কোন কাজে না জড়িয়ে আনুগত্যমূলক কাজ করার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুযায়ী সালাম-মুসাফাহা করবে এবং تقبل الله منا ومنكم এ দুআ বলার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করবে।
১৪. ঈদের দিন বিশেষভাবে মুআনাকা ও কোলা-কুলি করার কোন বিধান নেই। অনুরূপ ঈদের দিন খাস করে সম্মিলিতভাবে কবর যিয়ারত করাও কোন নিয়ম শরীয়তে নেই।
১৫. ঈদ উপলক্ষে উৎসব হিসেবে মেলার আয়োজন করা, সেখানে গান-বাজনা এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার ব্যবস্থা করা বৈধ নয়। অনুরূপ নিজ বাড়ীতেও শরীয়তের নীতিমালার পরিপন্থী কোন প্রকার আচার অনুষ্ঠান কারও উচিত নয়।
১৬. ঈদগাহে এক রাস্তায় যেয়ে অন্য রাস্তায় আসা সুন্নত। সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া-আসা করা উত্তম।
মনে রাখতে হবে যে, ঈদ ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত এবং কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম ব্যবস্থাপনা, তাই ঈদ উদযাপন এবং কুরবানী করার ক্ষেত্রে তাকওয়ার পরিপন্থী কোন কার্য-কলাপ একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য সমিচীন নয়। আল্লাহ আমাদের ঈদ এবং কুরবানীকে কবুল করে নিন। আমীন ॥
[তর্জুমান ডেক্স | মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-৪র্থ বর্ষ- ৪র্থ সংখ্যা (জুলাই-২০২১), পৃষ্ঠা-৪৪]