প্রশ্ন-উত্তর | মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-৪র্থ বর্ষ- ৪র্থ সংখ্যা (জুলাই-২০২১)
#প্রশ্ন (১) : আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি মনে করি আমার ওপর হজ্জ ফরয। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে হজ্জে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন। আ : মুমিন, সোনাতলা, বগুড়া
#উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلِلَهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
যারা বায়তুল্লাহর পথ অবলম্বনে সক্ষম তাদের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ পালন করা ফরয।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি শারীরিক ও আর্থিক সক্ষম হলেও পরিস্থিতি নিরাপদ না হওয়ায় বায়তুল্লায় পৌঁছতে অক্ষম, বিধায় আপনার কোন ত্রুটি নেই। বরং আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন এবং আল্লাহর সাহায্য চাইবেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি ভালো হলে এবং সে সময় পূর্ণ সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবেন। ওয়াল্লাহু আলাম।
#প্রশ্ন (২) : আমরা খবর মাধ্যমে জেনেছি, ২০২১ সালেও বহিরাগত মুসলিমদের হজ্জ করার সুযোগ দেয়া হবে না, শুধু সৌদী আরবে অবস্থানকারীদের মধ্য হতে ৬০০০০ (ষাট হাজার) মানুষ হজ্জ করার সুযোগ পাবেন। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কী সৌদী সরকারের জন্য শরীয়াতসম্মত ? ফখরুল ইসলাম, বাগমারা, রাজশাহী
#উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না, আর সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশালীদের ভালোবাসেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন একদেশ হতে আরেক দেশের যোগাযোগ, যাতায়াত বন্ধ এমন পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্ব হতে হাজীদের এনে কাবা প্রান্তে সমাবেশ ঘটানো যেন নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। যা আল্লাহ তা‘আলা নিষিদ্ধ করেছেন। অতএব, সৌদী সরকারের সিদ্ধান্ত শরীয়াতসম্মত। উল্লেখ্য যে, হজ্জ ইসলামের রোকন, এ বিষয়ে শুধু প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না বরং বিশ্বের শীর্ষ ইসলামী স্কলারদের পরামর্শ ও মতামতের আলোকে বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ সকল হাজ্জীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরূপ সিদ্ধান্ত শুধু ২০২০ ও ২০২১ সালে- এমনটা নয়, বরং মহামারী, প্লাবন ইত্যাদি কারণে অতীতেও বহুবার বৃহত্তর সার্থে হাজীদের নিরাপত্তায় হজ্জ বন্ধ রাখার নজির রয়েছে।
#প্রশ্ন (৩) : বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে হজ্জ করা সম্ভব হয়নি, ২০২১ সালেও হচ্ছে না। ভবিষ্যতের কথাও বলা যাচ্ছে না, এমতাবস্থায় হজ্জের জমানো টাকা কি অন্য কোন সাদকায়ে জারিয়ার কাজে ব্যয় করতে পারব? দয়া করে জানাবেন। আনিসুর রহমান, সীতাকু-, চট্টগ্রাম
#উত্তর : হজ্জ ইসলামের পঞ্চম রোকন। সামর্থ্যবানদের জন্য ফরয ইবাদত। করোনা অথবা অন্য কোন সমস্যার কারণে বিলম্ব হলেও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এটা ফরয আর সাদকা জারিয়া নফল। আর যদি হজ্জ নফল হয়ে থাকে এবং সাদকার বিষয়টি অধিক প্রয়োজনীয় হয় তখন সাদকা করা উত্তম।
#প্রশ্ন (৪) : মাহরাম ছাড়া কি মেয়েদের হজ্জ করা বৈধ? শোনা যাচ্ছে, সৌদী আরব মাহরাম ছাড়া হজ্জের অনুমতি দিচ্ছে, সঠিক তথ্য জানাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ
#উত্তর : মেয়েদের হজ্জ ফরযের জন্য একটি শর্ত হলো সাথে মাহরাম যাওয়া। এ শর্ত পূর্ণ না হলে মেয়েদের হজ্জ ফরয নয়। কারণ মাহরাম ছাড়া হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলে অবশ্যই গুনাগার হবে। সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস হতে বর্ণিত নাবী বলেন :
্রلاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَرَجُلٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الحَجَّ، فَقَالَ: اخْرُجْ مَعَهَا
কোনো মহিলা মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া সফর করতে পারবে না এবং কোনো মহিলার কাছে মাহরাম ব্যক্তি না থাকা অবস্থায় কোনো পুরুষও যেতে পারবে না। এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন। হে আল্লাহর রাসূল ! আমি অমুক যুদ্ধে যেতে চাই। আবার আমার স্ত্রী হজ্জে যেতে চায়? তিনি বললেন : তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জে যাও।
আমাদের জানামতে “সৌদি আরব মাহরাম ছাড়া হজ্জের অনুমতি দিচ্ছে” একথা সঠিক নয়। এটা হজ্জ ব্যবসায়ীদের মিথ্যা আশ্রয় ছাড়া কিছু নয়। সকলের আল্লাহকে ভয় করা উচিত।
#প্রশ্ন (৫) : পুরুষ ব্যক্তির পক্ষে মহিলা, আবার মহিলা ব্যক্তির পক্ষে পুরুষ কি বদলী হজ্জ করতে পারবে? না পুরুষের জন্য পুরুষ এবং মহিলার জন্য মহিলাই হতে হবে ? সঠিক উত্তর জানতে চাই। জনাব, মুখলিসুুর রহমান, টুংগীপাড়া, গোপালগঞ্জ
#উত্তর : বদলী হজ্জের জন্য একই লিঙ্গের হওয়া শর্ত নয়। সুতরাং নারীর পক্ষে পুরুষ বা নারী-অনুরূপ পুরুষের পক্ষে নারী বা পুরুষ বদলী হজ্জ করতে পারবে কোন অসুবিধা নেই। এ মর্মে অসংখ্য হাদীসে প্রমাণ রয়েছে। তবে বদলী হজ্জের জন্য আগে নিজের হজ্জ করা শর্ত। ওয়াল্লাহু আলাম।
#প্রশ্ন (৬) : যুল-হিজ্জা মাসে বিশেষ কোন করণীয় থাকলে জানিয়ে বাধিত করবেন। মারুফ মিয়া, শিবচর, মাদারীপুর
#উত্তর : যুলহিজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস, যার মর্যাদাপূর্ণ বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
(ক) যুলহিজ্জা হারাম মাসসমূহের অন্যতম, এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ। (খ) এ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের সেরা মর্যাদাপূর্ণ দিন;
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَببِيلِ اللَّهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন: এমন কোন দিন নেই যার ভাল আমল এ দশ দিনের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় (অর্থাৎ এ দশ দিনের ভালো আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়)। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়েও কি অধিক প্রিয়? তিনি বললেন: আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে অধিক প্রিয়, তবে ঐ ব্যক্তির জিহাদ বেশি প্রিয় যে ব্যক্তি জান-মালসহ জিহাদে বের হয়েছে কিন্তু কোনো কিছুই ফিরেনি, সবই আল্লাহর পথে শেষ হয়ে গেছে। এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, যুল-হিজ্জা মাসের প্রথম দশ দিনে সালাত, সিয়াম, তিলাওয়াত, দান-সাদাকাহ ইত্যাদি শরীয়াতসম্মত ইবাদাতসমূহ বেশি গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত। রাসূলুল্লাহ এ মাসের প্রথম নয় দিন সিয়াম পালন করতেন।
(গ) এ মাসে অতি মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো আরাফার দিন; হাজীদের জন্য ইবাদত ও দুআ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ দিন। আর যারা হজ্জে যাবে না তাদের জন্য অতি মর্যাদাপূর্ণ সিয়ামের দিন।
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّننَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَوَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
নাবী বলেন: আরাফার দিবসের সিয়াম; আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে পূর্বের এক বছর এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
(ঘ) এ মাসের দশম তারিখ ঈদুল আযহার দিন। এ দিনে ঈদের সালাত ও কুরবানীর বিশেষ ইবাদত রয়েছে।
(ঙ) এ মাসের চাঁদ দেখা হতে তের তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিশেষ তাকবীর-
الله اكبر، الله اكبر، لا اله الا الله، والله اكبر، الله اكبر ، ولله الحمد،
পাঠ করার বিশেষ ইবাদত রয়েছে।
(চ) এ মাসের আট তারিখ হতে তের তারিখ পর্যন্ত দিনগুলো হজ্জের বিশেষ কার্যক্রমের দিন। অতএব, যার পক্ষে যেটা সম্ভব এ মযার্দাপূর্ণ দিনগুলোতে সে সুযোগ নেয়া উচিত।
#প্রশ্ন (৭) : যুল-হিজ্জা মাসের চাঁদ দেখা দিলে যারা কুরবানী করে তাদের জন্য কিছু নিষিদ্ধ কর্ম রয়েছে, তা কী এবং এটা কি পরিবারের সকলের জন্য প্রযোজ্য? দলীল সহকারে জানাবেন।আউদ শেখ, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা
#উত্তর : যুল-হিজ্জা মাসের চাঁদ দেখা দিলে যিনি কুরবানি করার মনস্থ করেন তার জন্য নখ, চুল ইত্যাদি কাটা নিষিদ্ধ। অবশ্য এ নির্দেশ শুধু কুরবানিদাতার জন্য, তার অধিনস্থ পরিবারের সদস্যদের জন্য নয়। রাসূলুল্লাহ বলেন:
্রمَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ
যে ব্যক্তি কুরবানি করার মনস্থ করে সে যুলহিজ্জা মাসের চাঁদ দেখলে যেন তার নখ ও চুল না কাটে।
যুলহিজ্জা মাসের চাঁদ দেখা হতে কুরবানির পশু যবাই করা পর্যন্ত কুরবানি দাতার নখ ও সকল প্রকার চুল কাটা নিষিদ্ধ। তবে যারা তামাত্তু হাজ্জ করবেন তাদের উমরার কাজ সম্পন্ন করে হালাল হওয়ার নিয়তে মাথার চুল কাটাতে অসুবিধা নেই।
#প্রশ্ন (৮) : কুরবানীর গোশত কত ভাগে ভাগ করতে হয় এবং কাদের জন্য, কোন অমুসলিমকে কুরবানীর গোশত দেয়া যাবে কী? জানতে চাই। মোঃ মুহিব্বুল্লাহ, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর
#উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ
অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দরিদ্র-দুস্থকে খাওয়াও।
রাসূলল্লাহ বলেন: فَكُلُوا وَادَّخِرُوا وَتَصَدَّقُوا
অতঃপর তোমরা খাও, সঞ্চয় কর এবং দান কর।
কুরআন সুন্নাহর নির্দেশ হতে বুঝা যায় যে, নিজে খাবে, প্রতিবেশী আত্মীয় ও দুস্থ-দরিদ্রকে খাওয়াবে। এ হিসাবেই তিন ভাগের কথা বলা হয়। মাপ করে তিন ভাগ করে খেতে হবে এমন কোন স্পষ্ট নির্দেশ হাদীসে নেই। এ জন্য ইমাম ইবনু তাইমিয়া বলেন:
وَيَتَصَدَّقُ بِثُلُثِهَا وَيُهْدِي ثُلُثَهَا وَإِنْ أَكَلَ أَكْثَرَهَا أَوْ أَههْدَاهُ أَوْ أَكَلَهُ أَوْ طَبَخَهَا وَدَعَا النَّاسَ إلَييْهَا جَازَ
একতৃতীয়াংশ সাদাকা করবে, একতৃতীয়াংশ হাদিয়া দিবে। আর যদি বেশি অংশ খায়, অথবা হাদিয়া দেয়, অথবা খায় এবং রান্না করে মানুষকে দাওয়াত খাওয়ায় তাও বৈধ হবে।
অতএব মূল কথা হলো: কুরবানিতে তিন শ্রেণীর হক রয়েছে: কুরবানিদাতা পরিবারসহ খাবে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের হাদিয়া দিবে এবং অসহায় দরিদ্র-দুস্থকে দান-সাদাকা করবে। প্রয়োজনে কম-বেশি হলে অসুবিধা নেই। তবে বেশি দান করলে বেশি সাওয়াব পাবে। ওয়াল্লাহু আলাম।
#প্রশ্ন (৯) আরাফার দিবসে সিয়ামের ফযীলত কী এবং কারা এ সিয়াম রাখতে পারে দলীলসহ জানাবেন। কাউছার আহমাদ, মদন, নেত্রকোণা
#উত্তর : যারা হজ্জে যাবে তারা আরাফার দিবসে সিয়াম রাখবে না। কারণ নাবী আরাফায় অবস্থানে সিয়াম রাখেননি।
আর যারা হজ্জে যাবে না তাদের জন্য এটি মর্যাদাপূর্ণ সিয়াম। নাবী বলেন:
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
আরাফার দিবসের সিয়াম; আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে পূূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
#প্রশ্ন (১০) : একটি গরু একাধিক জনে কুরবানি দেয়া কী শুধু সফরের মধ্যে সীমাবদ্ধ? সঠিক তথ্য জানতে চাই।
জসীম উদ্দীন, ঝিনাইগাতী, শেরপুর
#উত্তর : কুরবানির প্রাণী ছাগল, ভেড়া, গরু ও উট ইত্যাদি। ছাগল ও ভেড়া এক ব্যক্তি বা এক পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানি করা যায়, একাধিক শরীক অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। অপরপক্ষে গরু ও উট কুরবানিতে একের অধিক সাত পর্যন্ত শরীক অংশগ্রহণ করতে পারে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، ..وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ
সাহাবী জাবির হতে বর্ণিত, নাবী বলেন: একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানি করা বৈধ।
অতএব, সাত ব্যক্তি, বা সাত পরিবারের প্রধান একটি গরু বা উট কুরবানিতে অংশ নিতে পারবে। আর একাধিক অংশগ্রহণ সফর ও মুকীম সর্বাবস্থায় বৈধ। সফরে সীমাবন্ধ নয়। কারণ কোন হাদীসে সফরের সীমাবন্ধতার নির্দেশ আসেনি। রাসূলুল্লাহ হতে এ পর্যন্ত কোন সাহাবী, তাবেয়ী বা কোন গ্রহণযোগ্য ইমাম সফরে সীমাবদ্ধতার কথা বলেননি। অতএব সফরে সীমাবদ্ধতার ফাতাওয়া অগ্রহণযোগ্য।
#প্রশ্ন (১১) : আমরা অনেক সমাজে দেখি যারা কুরবানীর পশু যবাই ও প্রস্তত করে দেয়, তাদেরকে পশুর মাথা বা গোশত দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়াতসম্মত? দলীলসহ জানতে চাই। কামরুল মোল্লাহ, ভাঙ্গা, ফরিদপুর
#উত্তর : কুরবানির পশু যবাই করা বা প্রস্তুত করার বিনিময়ে কুরবানির পশুর মাথা বা গোশত অথবা চামড়া প্রদান করা বৈধ নয়। নাবী আলী উপদেশ দিয়ে বলেন. وَلَا يُعْطِيَ فِي جِزَارَتِهَا مِنْهَا شَيْئًا
তিনি যেন কসাইদের কাজের বিনিময়ে কুরবানির পশুর কোন কিছু না দেন। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, আলী বলেন, ্রنَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا আমরা কসাইকে আমাদের পক্ষ হতে আলাদা পারিশ্রমিক দিতাম।
যেহেতু কুরবানির পশুর কোন কিছুই বিক্রয় করা যাবে না, এ কারণেই যবাইকারী ও প্রস্তুতকারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত, মাথা বা চামড়া দেওয়া যাবে না। দিলে তা বিক্রয় করা বোঝাবে। অতএব, তাদেরকে সাধারণভাবে খাওয়ার জন্য হাদীয়াস্বরূপ গোশত দেয়া যেতে পারে, কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে আলাদা কিছু দিতে হবে।
#প্রশ্ন (১২) : কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি চুরি বা হারিয়ে যায় তাহলে করণীয় কি ? সোহেল রানা, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ
#উত্তর : সামর্থ্য থাকলে পশু ক্রয় করে কুরবানি দেবে, আর সামর্থ্য না থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : لايكلف الله نفسا إلا وسعها
“আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না”।
#প্রশ্ন (১৩) : ঈদের সালাতের হুকুম কী? বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঈদগাহে সালাত আদায় সম্ভব না হলে করণীয় কী? রুবেল মিয়া, আছিম, ময়মনসিংহ
#উত্তর : রাসূলুল্লাহ মদীনার জীবনে প্রতি বছর ঈদের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছেন এবং মেয়েদেরকে ঈদের সালাতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ঈদের সালাত সুন্নাত নয়, বরং ওয়াজিব। কারণ সুন্নাতের জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে নির্দেশ আসতে পারে না। অপরপক্ষে ঈদের দিন জুমু‘আ হলে জুমু‘আর সালাত শিথিল করা হয়েছে। সুন্নাতের জন্য ফরয শিথিল হতে পারে না। বরং ফরযের জন্যই ফরয শিথিল হতে পারে। সুতরাং ঈদের সালাত ওয়াজিব।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় সম্ভব না হলে জামে মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করবে। ওয়াল্লাহু আলাম।
#প্রশ্ন (১৪) : ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে কোন সালাত নেই, আমরা এটাই জানি। অতএব যদি মসজিদে ঈদের সালাত হয় তাহলে কি দুখুলুল মাসজিদ পড়া যাবে? অনুরূপ খুতবায় মিম্বার ব্যবহার করা যাবে কি?
আবদুল হাকীম, মুজিবনগর, মেহেরপুর
#উত্তর : ঈদের সালাতের পূর্বে ও পরে কোন সালাত নেই, তাই সে নিয়তে কোন সালাত পড়া যাবে না। তবে মসজিদে প্রবেশ করে বসা নিষেধ। সেহেতু দু’রাকাআত দুখুলুুুল মসজিদ পড়ে বসবে, এতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ দু’রাকাআত সালাত না পড়ে বসা নিষেধ। আর এটা মূলত মাসজিদের আদব রক্ষার্থে সালাত, ঈদের সালাতের কোন অংশ নয়।
নাবী ঈদগাহে কোন মিম্বার তৈরি করেননি এবং মসজিদ হতে মিম্বারও আনা হয়নি। তবে তিনি সাধারণত উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, সেই হিসেবে মসজিদে ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হলে মসজিদের মিম্বারে খুতবা দেয়াতে অসুবিধা হবে না। ওয়াল্লাহু আলাম।
#প্রশ্ন (১৫) : ঈদের সালাতের জন্য ঈদগাহে মেয়েদের যাওয়ার নির্দেশ এসেছে, কিন্তু ঈদগাহে যদি মেয়েদের কোন ব্যবস্থা না থাকে তাহলে কি তারা মসজিদে বা কোন জায়গায় পৃথক জামা‘আত করে সালাত আদায় করতে পারবে? বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন।
হাবিবুর রহমান, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা
উত্তর : ঈদের সালাতে মেয়েদের পৃথক জামাআতের বৈধতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না, তবে সাধারণত মেয়েদের ইমামতিতে মেয়েরা জামা‘আতের সাথে পৃথকভাবে সালাত আদায় করতে পারে। অবশ্য পুরুষ ইমামের ন্যায় সামনে একাকী দাঁড়াবে না। বরং প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবে।
শাইখ ইবন বায -কে জিজ্ঞাসা করা হয়, ঈদগাহ অনেক দূরে হওয়ার কারণে মেয়েদের যাওয়া সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় মহল্লার মেয়েরা একত্রিত হয়ে একজন বিজ্ঞ মহিলার ইমামতিতে ঈদের সালাত আদায় করে এটা কি বিদ‘আত হবে? তিনি উত্তরে বলেন : পুরুষদের সাথে মেয়েরা ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় করবে এটাই শরীয়তের বিধান। কিন্তু যদি কোন কারণে মেয়েদের ঈদগাহে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে তারা তাদের বাড়িতে একাকী অথবা জামা‘আতে সালাত আদায় করবে। এতে কোন অসুবিধা মনে করি না। অবশ্য মেয়েরা পৃথকভাবে জামা‘আতে ঈদের সালাত আদায় করলে কোন খুতবা প্রদান করবে না। শুধু সুন্নাতী নিয়মে সালাত আদায় করবে। যেমন : কোন পুরুষের ঈদের সালাত ছুটে গেলে শুধু দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবে। ইমাম বুখারী অধ্যায় বেধেছেন-
بَابٌ: إِذَا فَاتَهُ العِيدُ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ
যখন ঈদের জামা‘আত ছুটে যাবে তখন শুধু দু’রাকাআত ঈদের সালাত পড়বে। ওয়াল্লাহু আলাম।
প্রশ্ন-উত্তর | মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-৪র্থ বর্ষ- ৪র্থ সংখ্যা (জুলাই-২০২১)