সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান শেষে জমঈয়ত সভাপতির দেশে প্রত্যাবর্তন
বিশ্বের খ্যাতিমান ওলামা-মাশায়েখ ও আন্তর্জাতিক দাওয়াহ্ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-এর আয়োজন করে রাজকীয় সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রণালয়। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কনফারেন্স-এর শুভ সূচনা হয় গত ১৩ আগস্ট রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এবং পরদিন ১৪ আগস্ট সোমবার বিকাল ৪টায় সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেমিনারের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের মাননীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক। সেমিনারে যোগদানের উদ্দেশ্যে মাননীয় সভাপতি গত ১১ আগস্ট শুক্রবার রাতে সৌদি এয়ার লাইন্সযোগে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
পবিত্র মক্কা নগরীর বায়তুল্লাহ’র কোলঘেঁষে পাঁচ তারকা হোটেল হিলটন-এর কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত এ কনফারেন্সে বিশ্বের ৮৫টি দেশের দেড় শতাধিক খ্যাতিমান আলেম ও ইসলামী স্কলার অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজকীয় সৌদি সরকারের ধর্মমন্ত্রী শাইখ ড. আব্দুল লতীফ বিন আব্দুল আযীয আলুশ- শাইখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে মাননীয় জমঈয়ত সভাপতি এক নাতিদীর্ঘ এক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে এই মহতি কনফারেন্স আয়োজনের জন্য সৌদি বাদশাহ্ সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে-সাউদ, প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান, ধর্মমন্ত্রী শাইখ ড. আব্দুল লতীফ বিন আব্দুল আযীয আলুশ-শাইখ, ধর্মসচিব শাইখ ড. আওয়াদ আল আনাযীকে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
জমঈয়ত সভাপতি বলেন, বর্তমান সময়ে মুসলিম উন্মাহ’র পারস্পরিক বিভেদ-বিভাজন ও অনৈক্য জাতীয় সমস্যা থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এহেন সন্ধিক্ষণে সৌদি ধর্মমন্ত্রণালয় যে কনফারেন্সের আয়োজন করেছে তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসার্হ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই কনফারেন্স-এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের দার উন্মোচিত হয়েছে; যা সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ এর প্রান্তসীমায় পৌঁছে দিবে। তিনি আরো বলেন, তাওহীদের সূতিকাগার ও উর্বর ভূমি সৌদি আরব বিশুদ্ধ আকীদাহ ও মানহাযের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। তাদের দাঈগণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাওহীদের এই মর্মবাণী পৌঁছে দিচ্ছেন। ফলে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ এখন তাওহীদের মর্মমূলে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে।
মাননীয় সভাপতি আরো বলেন, ইসলাম আমাদেরকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে শিক্ষা দেয়। কুরআন-সুন্নাহ’য় মধ্যম পন্থা অবলম্বনের তাকিদ এসেছে। চরমপন্থা কিংবা বাতিলের সাথে আপোষকামিতাকে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সৌদি আরবের পথ ধরে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো এ জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করলে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক ত্বরান্বিত হবে ইনশা-আল্লাহ।
এ কনফারেন্সে যোগদান করেন পবিত্র কাবা’র সম্মানিত ইমাম ও খতীব আল্লামা ড. আব্দুর রহমান আস সুদাইস, পবিত্র মসজিদে নববীর ইমাম ও খতীব শাইখ আলী আল হুযাইফী, অল-ইন্ডিয়া জমঈয়তে আহলে হাদীসে সভাপতি শাইখ আসগর আলী মাদানী, পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীসের সভাপতি প্রফেসর সাজেদ মীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান শাইখ মাহমুদুল হাসান-সহ বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কিরাম।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ধর্মসচিব শাইখ ড. আওয়াদ আল আনায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র কুরআন মাজিদ পোড়ানোর প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দাসহ মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করে কতিপয় প্রস্তাবনা পেশ করেন।
উল্লেখ্য যে মাননীয় জমঈয়ত সভাপতি চলতি বছরে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে রয়েল গেস্ট হিসেবে পবিত্র হজ্জ পালন করেন। এছাড়াও তিনি সৌদি আরব, জাপান, ভারতের কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান করেন। জমঈয়ত সভাপতি গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।