জিজ্ঞাসা (০১): আসসালামুআলাইকুম…বর্তমানে আহলে কুরআন বা কুরআনি নামে একটি দল বের হয়েছে। তারা নিজেদেরকে কুরআনের অনুসরণকারী বলে দাবি করে থাকে। তারা বলে মুসলিমদের জন্য কুরআনই যথেষ্ট; এবং রাসুলের হাদীস বা সুন্নাতের কোন প্রয়োজন নেই। এদের হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অবস্থান কি হবে? [আবু আব্দুল্লাহ জনি আহমাদ, টাঙ্গাইল]
জবাব: ওয়ালাইকুমমুসসালাম ওয়ারহমাতুল্লাহ…আলহামদুলিল্লাহ, সালাত এবং সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী এবং রাসুল মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তার পরিবারবর্গ এবং তার সাহাবায় কেরাম এবং শেষ দিবস পর্যন্ত প্রতিটি মুসলিম নর নারীর উপর, আম্মা বাদ। উপরোক্ত প্রশ্নে যাদের সম্পর্কে বলা হল, আসলে এদেরকে আহলে কুরআন বা কুরআনিক বলা ঠিক নয়। তাদের সঠিক পরিচয় হচ্ছে, তারা সুন্নাত বা হাদীস অস্বীকারকারী। তারা কখনোই কুরআনের অনুসারী নয়; বরং তারা কুরআনের দুশমন। তারা যদি আসলেই কুরআনের অনুসারী হতো, তাহলে তারা রাসুলের হাদীস বা সুন্নাতকে মেনে নিতো। কেননা কুরআনে কারীমের অনেক জায়গায় রাসুলের আনুগত্য ও অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং সরাসরি রাসুলের আদেশ, নিষেধ এবং ফয়সালা মেনে চলার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। তারা যদি রাসুলের আনুগত্য এবং অনুসরণকে অস্বীকার করে, তবে তারা যেন কুরআনকেই অস্বীকার করলো। অতএব যারা রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, রাসুলের আনুগত্য ও অনুসরণকে অস্বীকার করে, তারা আহলুল কুরআন বা কুরআনিক নয়। তারা কুরআনের বিরোধিতাকারী, তারা কুরআন অমান্যকারী, তারা কুরআন অস্বীকারকারী, বিভ্রান্ত ও বিভ্রান্তকারী। শুধু তাই নয়, বরং যারা সরাসরি রাসুলের হাদীসকে অস্বীকার করবে তারা আহলুস সুন্নাহ এর আলেমদের ঐক্যমতে কাফের, এবং হাদীস অস্বীকার করার মাধ্যমে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে অথবা তারা এর মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা আহলুস সুন্নাহ এর আলেমদের কাছে কুরআন যেমন হুজ্জৎ, তেমনিভাবে হাদীসও হুজ্জৎ, কুরআনের একটি আয়াত যেই রকম গুরুত্ব ও মর্যাদা রাখে, তেমনিভাবে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত রাসুলের হাদীসও কুরআনের আয়াতের মতো গুরুত্ব ও মর্যাদা রাখে। কারণ কুরআন যেই রকম ওহী, হাদীসও সেই রকম ওহী। অতএব কুরআন এবং হাদীসের মাঝে পার্থক্য করার কোন সুযোগ নেই, সহীহ হাদীস কখনোই কুরআনের বিপরীতে যাবেনা, এবং কুরআনের কোন আয়াতও বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হাদীসের বিপরীতে যাবেনা।
অতএব রাসুলের হাদীস অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই, বরং প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে, রাসুলের হাদীসকে মেনে নেওয়া, এবং কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা, সুন্নাতের প্রতি মানুষকে আহব্বান করা এবং যারা রাসুলের সুন্নাত বা হাদীসকে অস্বীকার করে, তাদের ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক করা। কেননা ইসলামের অনেক বিষয়ে ইখতেলাফ রয়েছে এবং থাকবে কিন্তু রাসুলের হাদীস মানা এবং না মানার ব্যাপারে ইখতেলাফের কোন সুযোগ নেই, কারণ এটা হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর বিষয়। যার উপরে এই উম্মাহর ইজমা হয়ে গেছে। সুতরাং হাদীস অস্বীকারকারীরা হল নব্য আবিষ্কৃত বিদআতি, গোমড়া ও পথভ্রষ্ট এবং অবাঞ্ছিত দল, যারা মানুষকে ঈমান থেকে কুফরের দিকে নিয়ে যাওয়ার দাওয়াত দিচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে এবং মুসলিম উম্মাহকে হাদীস অস্বীকারকারী বাতিল ফির্কা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
কুরআন ও হাদীসের দলিল:
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা শাসক (কর্তৃত্বশীল ও বিদ্বান) তাদেরও। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা : ৫৯)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
“বলঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” (সূরা আল-ইমরান : ৩১)
আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন,
فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِهٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَهُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
“অতএব, যারা তাঁর নবীর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিত্না (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রমণ করবে।” (সূরা নূর : ৬৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন,
وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো”। (সূরা হাশর : ৭)
আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন,
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে, পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জীবনীতে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে”। (সূরা আহযাব : ২১)
আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন,
فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবেনা এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে”। (সূরা নিসা : ৬৫)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ اَمۡرِهِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیۡنًا
“যখন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফয়সালা দিয়ে দেন, তখন কোন ঈমাদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই। যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়”। (সূরা আহযাব : ৩৬)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اَنَّهُمۡ اِذۡ ظَّلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ جَآءُوۡکَ فَاسۡتَغۡفَرُوا اللّٰهَ وَ اسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ الرَّسُوۡلُ لَوَجَدُوا اللّٰهَ تَوَّابًا رَّحِیۡمًا
“আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত”। [সুরা আন-নিসা : (৪:৬৪)]
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡهِمۡ وَ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
“…(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [সুরা আন-নাহাল : (১৬:৪৪)]
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰهَ ۚ وَ مَنۡ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡهِمۡ حَفِیۡظًاؕ
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি”। [সুরা আন-নিসা : (৪:৮০)]
এবং কি হাদীস অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ ﷺ এর সতর্কতা মুলক বেশ কিছু হাদীস রয়েছে-
হাদীস :
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ، وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ، أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الْأَهْلِيِّ، وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ، وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ، إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا، وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ
“আল-মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোনো প্রাচুর্যবান লোক তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নিবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জেনে রাখো! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়। অনুরূপ সন্ধিবদ্ধ অমুসলিম গোত্রের হারানো বস্তু তোমাদের জন্য হালাল নয়, অবশ্য যদি সে এর মুখাপেক্ষী না হয়। আর যখন কোনো লোক কোনো সম্প্রদায়ের নিকট আগন্তুক হিসেবে পৌঁছে তখন তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। যদি তারা তা না করে, তাহলে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে হলেও তার মেহমানদারীর পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার তার আছে”। [সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪৬০৪]
হাদীস :
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ الْكِنْدِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ “ يُوشِكُ الرَّجُلُ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يُحَدَّثُ بِحَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِي فَيَقُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ اسْتَحْلَلْنَاهُ وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ مِنْ حَرَامٍ حَرَّمْنَاهُ . أَلاَ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مِثْلُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ ” .
“আল-মিক্বদাম ইবনু মাদীকারিব আল-কিনদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই কোন ব্যাক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী (সাঃ) বলেন) সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ”। [সুনান ইবনু মাজাহ-১২]
হাদীস :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
“আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে”। [সহীহ বুখারী (তা: পা:)-৭২৮০]
হাদীস :
وَعَن مَالك بن أنس مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ
“মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস”। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত-১৮৬]
হাদীস :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَمْرٍو السَّلَمِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، يَقُولُ وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مَوْعِظَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هَذِهِ لَمَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا قَالَ “ قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا لاَ يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلاَّ هَالِكٌ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَعَلَيْكُمْ بِالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّمَا الْمُؤْمِنُ كَالْجَمَلِ الأَنِفِ حَيْثُمَا قِيدَ انْقَادَ ” .
“ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহাত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হল। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে। তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মুমিন ব্যাক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়”। [সুনান ইবনু মাজাহ-৪৩]
“ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেন : নিঃসন্দেহে রাসূল (সঃ) তাঁর রবের পক্ষ থেকে যা বর্ণনা করেন তার প্রতি ঈমান আনা ফরয। চাই আমরা এর অর্থ বুঝি আর না বুঝি। কেননা তিনি সত্যবাদী। সুতরাং কুরআন সুন্নাহ তে যা বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনা প্রত্যেক মু’মিনের জন্য ফরয। যদিও সে এর অর্থ না বুঝে”। [মাজমাআ ফাতাওয়া, ৩/৪১]
“আল্লামা সুয়ুতী রহ. তার ‘মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিস্সূন্নাহ’ কিতাবে লেখেন- তোমরা জেনে রাখ! -আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন- যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস -চাই তা তার কথা হোক বা কর্ম হোক- দলীল হওয়াকে অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেল। তার হাশর ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হবে অথবা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কোনো কাফের দলের সাথে হবে।’ সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা বাধ্যতামূলক হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত রয়েছে”।
“ইমাম ইসহাক্ব ইবনে রাহওয়াইহ্ (রহঃ) বলেন : যার নিকট আল্লাহর রাসূল (সঃ) থেকে কোনো সংবাদ পৌঁছবে। আর সে এই সংবাদের বিশুদ্ধতাকে স্বীকার করবে। এরপর সে আল্লাহভীতি ছাড়াই তা প্রত্যাখ্যান করবে তাহলে সে কাফের বলে গণ্য হবে”।
“আল্লামা ইবনুল ওয়াযির (রহঃ) বলেন : রাসূল (সঃ) এর হাদীস জেনেও তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করা সুস্পষ্ট কুফরি। (আল আওয়াসিম ওয়াল ক্বাওয়াসিম, ২/২৭৪)”।
“শাইখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, যারা নাবী (সঃ) থেকে প্রমাণিত বিশুদ্ধ হাদীসকে অস্বীকার করবে সে নিঃসন্দেহে কাফের। অনুরূপ যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে বলবে সুন্নাহ দিয়ে দলীল গ্রহণ করা জায়েজ নেই। কুরআন-ই যথেষ্ট। এই ব্যক্তিও কাফের। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ তা‘য়ালা নাবী (সঃ) কে কুরআন দান করেছেন। সাথে অনুরূপ কিছু দিয়েছেন। কিন্তু কিছু হাদীস রয়েছে সন্দেহপূর্ণ। এর সনদও শক্তিশালী নয়। আর কিছু সনদে সমস্যা আছে। ফলে তা ভেবে দেখতে হবে”।
“ফাতওয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমার মধ্যে এসেছে যে, যে ব্যক্তি সুন্নাতি আমলকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। অস্বীকার করেছে সমস্ত মুসলিমদের ইজমাকে। (আল মাজমাআতুস সানিয়াহ : ৩/১৯৪)”।
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (১৯২৫-২০০১ খ্রি.) বলেন,
المصدر الثاني: يعني: في العدد، وليس في الترتيب؛ فإن منزلتها إذا صحت عن النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كمنزلة القرآن
“হাদীস বা সুন্নাহ হ’ল ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস। এর অর্থ তা ক্রমিক গণনায় দ্বিতীয়; তারতীব বা ধারাবাহিকতায় নয়। কেননা হাদীস যদি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয় তবে তা কুরআনেরই সমমর্যাদা সম্পন্ন। [মাজমূ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, সংকলন : ফাহাদ ইবনু নাছির আস-সুলায়মান (রিয়াদ : দারুস সারিয়া, ১৯৯৬ খ্রি.), ৮/৩৯২]। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
[উত্তর প্রদানে-ফাতাওয়া ও গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস]